কিশোরদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট – এক্সপার্ট ইনসাইট

সাইবার ওয়ার্ল্ড

সাইবার অর্থ অনলাইন দুনিয়া। অনলাইনের মাধ্যমে যা কিছু  আশা করা হয় তাকে সাইবার ওয়ার্ল্ড বলে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে একে অপরের সাথে খুব দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে আবার অনেক সময় অনেক ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে যেমন পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা হয় নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা তেমনি নানান অপরাধমূলক কাজও সংগঠিত হতে পারে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে যে সকল ক্রাইম বা অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে তাকে Cyber Crime বলে।

আমরা জানি প্রত্যেকটি জিনিসের সুফল কুফল থাকে। কমবেশি এই সুফল নির্ভর করে আমরা কিভাবে কোন জিনিস ব্যবহার করছি তার উপরে। তেমনি সাইবার ওয়ার্ল্ড আমাদের জন্য সদা উন্মুখ হলেও এর সুষ্ঠু ব্যবহারই আমাদের দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলের হবে অন্যথায় তা তরুণ-তরুণীদের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য অশনিসংকেত।

সাইবার ওয়ার্ল্ড বনাম টিনেজারস:

বাংলাদেশ এখন তরুণদের দেশ। যাকে আমরা বলি টিনেজারস। আমাদের দেশের ৪৯% মানুষের বয়স ২৭ বা তার নিচে। অর্থাৎ একটি বিরাট অংশ বলতে গেলে টিনেজারস। দেশে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে ইন্টারনেটের গ্রাহক ৯ কোটি ৯৪ ২৮ লক্ষ হাজার। (সূত্র: BTRC)

উপরিউক্ত তথ্য থেকে সহজেই অনুনয়ে, তরুণ তরুণ জনসংখ্যার বিশাল অংশই ইন্টারনেট জগতের সাথে সুপরিচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো মানুষের অবশ্যই জ্ঞান থাকা উচিত কি করবে এবং কি করবেনা।

তেমনি Cyber World এর ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন আছে, যে তারা অনলাইন জগতে কি করবে আর কি করবেনা। এক্ষেত্রে বর্তমান আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে টিনএজারদের অবশ্যই আপডেটেট থাকতে হবে এ বিষয়ে সন্দেহ নাই। তবে তাদেরকে পাশাপাশি ইন্টারনেট লিটারেসি সম্পর্কেও ধারণা রাখা উচিত।

বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৩৭ হাজার নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যোগ হচ্ছে তবে আমাদের দেশে টিনএজারসদের কাছে ইন্টারনেট বলতে ফেসবুক,ইমো,ভাইবার,হোয়াটস অ্যাপ ও ইউটিউবই মুখ্য। সাধারণত তারা এগুলোর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। তথ্যের আদান প্রদান ঘটায় ও তাদের ব্যক্তিগত মতামত জানান দেবার পাশাপাশি নানা জিনিস শেয়ারিং করা,ছবি আপলোড দেওয়া,অনুভূতি বর্ণনা করার সুযোগও তারা এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করে থাকে।

তবে বাস্তবিক অর্থে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও বাংলাদেশে ইন্টারনেট লিটারেসি বা সঠিক প্রশিক্ষণের কোন সুবিধা গড়ে ওঠেনি।এক্ষেত্রে ইন্টারনেটকে আমরা ছবি হিসেবে কল্পনা করলে বিষয়টি বুঝতে পরিষ্কার হবে।

ছুরি যেমন ভালো কাজে বা উপকারে আসে তেমনি অনভিজ্ঞ বা অসাবধানতাবশত কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে বিলম্ব করেনা। তেমনি ইন্টারনেট ভাল কাজের পাশাপাশি এর মাধ্যমে দুর্ঘটনা ও সমস্যা হতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশ তাই শিক্ষাকে স্কুল এর কার্যক্রমের অন্তর্গত করেছে। যার ফলে তাদের শিশু কিশোরেরা দায়িত্বশীল ব্যবহারের পাশাপাশি কিভাবে গুজব পরিহার নিজের একাউন্টের Privacy, অন্যের সাথে সম্মানজনক আচরণ, নৈতিকতা, তথ্য চুরি না করা, দেশের বিদ্যমান লঙ্ঘন না করা, পাশাপাশি দেশদ্রোহী কোন কর্মকান্ডে রাতে তারা জড়িত না হয় সে জন্যে সুষ্ঠুভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। তাছাড়া Cyber Bullying বা হয়রানি প্রতিরোধ বা এগুলোর জন্য প্রতিকার ইত্যাদি বিষয়েও শেখে। কিন্তু আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এখনও এ বিষয়গুলোকে জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় পক্ষে খুববেশি নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের দেশে Expert সংখ্যা কম বা প্রয়োজনানুযায়ী অনলাইন সেবা ট্রাইব্যুনালের তৎপর্যতা বিদ্যমান। এমতাবস্থায় নিজের সাইবার জগত নিজে নিজে সাজানো এবং দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করা প্রতিটি তরুণ-তরুণীদের উচিত। তারা তাদের বিবেকবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে পারস্পরিক মূল্যবোধ শ্রদ্ধাশীলতা ইত্যাদি অনুযায়ী আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি অনুযায়ী আমাদের ব্যক্তি ও আচরণের প্রতিফলন ঘটানো উচিত সবক্ষেত্রে। সেটি হোক সমাজ জীবনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আমেরিকার Ministry of Internal Affairs & Communications Internet Literacy কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন:-

•             ইন্টারনেটের অবৈধ ও ক্ষতিকারক বিষয়গুলো বোঝা ও তা থেকে দূরে থাকা।

•             ইন্টারনেটের মাধ্যমে সঠিকভাবে এবং অপরকে সম্মান করে যোগাযোগ করার ক্ষমতা।

•             নিজের বা নিজের একাউন্টের ব্যক্তিগত তথ্যাদি গোপন রাখা।

সাইবার জগতের কার্যক্রমের মধ্যে যে ভুল সচরাচর করে থাকে:

•             গুজব ছড়ানো।

•             আইনগতভাবে ভিক্তিহীন কোন নিউজ শেয়ার দেওয়া।

•             বুলিং।

•             অন্যের ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য ফাঁস করা।

•             দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে কোন কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে করা।

•             কারও তথ্য চুরি করা।

•             ভুল সংবাদ শেয়ার দেওয়া।

•             রাষ্ট্রদ্রোহী কোন কাজ করা।

•             ধর্মীয় উসকানিমূলক কথা বলা।

•             বিদ্বেষ ছড়ানো।

•             নিজের ব্যক্তিগত ছবির Privacy রাখতে না পারা।

•             যেকোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা।

•             একাধিক ডিভাইস দিয়ে আইডিতে ঢোকা।

•             ট্রলিং করা।

এই বিষয় গুলো করা যাবে না। একটা সুন্দর Cyber Space তৈরী করতে আমাদের দরকার এই নিয়ম কানুন গুলো মেনে চলা।

লেখক –

আব্দুল্লাহ আল জাবের হৃদয়

সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিষ্ট

পরিচালক, সাইবার ৭১

Leave a Reply