রোদ্দুর | নওশীন তাবাসসুম
বৃষ্টিভেজা দুপুর।টিফিন শেষ হয়ে আরেক তরফা ক্লাস শুরু হতে যাবে,ঠিক সেই সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি।
এরকম একটা অলস দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে ক্লাস করতে যেমন ইচ্ছে করে না,নিতেও তেমন ইচ্ছে করে না।তাই টিচাররা অলস সময় যখন কাটাচ্ছিল টিচার্সরুমে-তখন একদল দুরন্ত কিশোরি বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।গান গাইছে হেরে গলায়।হঠাৎ _বৃষ্টি থেমে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোদ উঠল!সে আবার যে সে রোদ না-এক্কেবারে ঝকমকে রোদ!কি তেজ তার!ওরা দলবেঁধে ক্লাস ফেলে রেলগাড়ি হয়ে ছুটল পুকুরপাড়ে।গাছগাছালিতে ভরা ওদের সুন্দর স্কুলের পুকুরটায় তখন শাপলা হাসছে।হঠাৎ ওরা আবিষ্কার করল ইউক্যালিপটাস গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সরু পথ ধরে ধোয়ার মত রোদ এসে পড়েছে!অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটি দেখতে যখন ওরা ব্যস্ত ঠিক তখনই ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল-‘আমাদের টিমের নাম হবে রোদ্দুর।’
ব্যাস!সৃষ্টি হয়ে গেল একদল নাইনে পড়ুয়া কিশোরিদের তৈরি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন-রোদ্দুর ; যা সিরাজগঞ্জের মত একটা ক্ষুদ্র মফস্বল শহরে ভাবাটা অনেকটাই আশ্চর্যের।কিন্তু বলে না?ইচ্ছেটাই বড়! শুরু হল প্ল্যান।ঠিক হল-প্রতি মাসে একটা মাটির ব্যাংক কেনা হবে।সেই ব্যাংকে রোদ্দুরের প্রত্যেকে প্রতিদিন টাকা রাখবে।কম হলেও ক্ষতি নেই।সেই ব্যাংক ভাংগা হবে মাসের শেষের দিকে।তারপর করা হবে সাধ্যের মধ্যে সোসাল ওয়ার্ক। তাই ত সবাই টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, রিক্সায় না যেয়ে পায়ে হেটে টাকা বাঁচিয়ে এমনকি নিজের জমানো টাকা দিয়ে ভর্তি করা হয় ব্যাংক।এবং আশ্চর্যজনকভাবে ওরা ঈদের আগে ১২ জন দোকানে,টি-স্টলে কাজ করে এমন বাচ্চাদের আচমকা পোষাক উপহার দিয়ে চমকে দেয়।হ্যা।কাজটা দেখতে গেলে খুব ক্ষুদ্রই;কিন্তু সেটা সাহস করে যখন একদল কিশোরিরা করে-তখন তা হয়ে দাঁড়ায় অসাধারণ। এমনকি ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে ওরা গিয়েছিল এক গন্ডগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।সেখানে কম হলেও ৭০ জন ছাত্রছাত্রীকে ওরা উপহার দেয় -সোয়েটার, কলম আর চকলেট!
আশ্চর্য না?হ্যা।নিঃসন্দেহে আশ্চর্য!কারণ ওদের দেখলে মনেই হয়না ওরা একটা বিশাল লক্ষ্যের দিকে প্রতিনিয়ত এগোচ্ছে। আর সবার মতো ওরাও রাত জেগে ম্যাথ,ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজির হোমওয়ার্ক করে।প্রতিদিন রুটিন মেনেই টিচারের পানিসমেণ্ট পায়।রোজ ওরাও বিকেলে কোচিং করে আর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে।কিন্তু ওরা স্বপ্ন দেখে।সেই স্বপ্ন ওদের পড়তে বসায়,এগিয়ে নেয়।স্কুলে বা কোচিং এর বাইরে যতটা সময় পায়-পরিকল্পনা করে;কিভাবে একটা বাচ্চার বৃষ্টিভেজা দিনগুলোতে রোদ উপহার দিবে!হাসি ফুটাবে!স্বপ্ন দেখাবে!ব্যাস!একটা মুখের হাসি-ই ওদের আবার ক্লাসে ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড বানায়।ওরা চায় ওদের মত সবাই হাসুক।স্বপ্ন দেখুক।ওরা সকলে মিলে যখন রোদ তখন ওদের সুর্য হয়-অভিভাবকরা! রোদ্দুরের কোনো প্রধান ব্যক্তি নেই।এখানে সবাই এক এবং অভিন্ন-স্বপ্নে,বিশ্বাসে আর কাজে! মজার ব্যাপার হল,রোদ্দুর ওদের স্কুলে তিন তিনটা ক্লাব খুলে তার পরিচালনাও করছে নিজেদের উদ্যোগে!রোদ্দুর এগিয়ে যাক অনেকদূর।স্বপ্ন পূরণ হোক।